ফরিদপুরের মধুখালীর একটি মন্দিরে আগুনের ঘটনা সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই নির্মাণশ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো ২ জন শমিক গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । হাসপাতালে আনার আগে তাদের উদ্ধার করতে যেয়ে আহত থানার ওসি সহ আরো ১১ পুলিশ সদস্য।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭ টায় উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীর কালী মন্দিরে আগুনের ঘটনা ঘটে। ওই মন্দিরের পাশেই পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে নির্মাণশ্রমিকরা টয়লেট নির্মাণের কাজ করছিলেন। বিক্ষুব্ধ জনতা তখন তাদের ওপর হামলা চালায়। তাতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ হামলায় ৪ জন নির্মাণ শমিকদের জেলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় আনা হলে ২ জনের মৃত্যু হয় এবং বাকি দুজন হাসপাতালে ভর্তি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানার ওসি সহ আরো ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদের ২ জন সদস্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে। এছাড়াও পুলিশ নির্মাণ শ্রমিকদের আরো ৪ জনকে অক্ষত অবস্থায় থানায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কে বা কারা মন্দিরে আগুন দিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন সাংবাদিকদের বলেন কালবেলাকে জানান, মাগরিবের নামাযের পরে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবু আমাকে ফোনে জানান “লেবাররা এখানে মন্দিরে আগুন দিয়েছে, আপনি তাড়াতাড়ি আসেন তেদরকে ধরে রাখছি।”
তাৎক্ষণিকভাবে আমি সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার জনতা। আমি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করি কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সরে গিয়ে ইউএনও সাহেবকে ফোন দেই। পরে ইউএনও এবং পুলিশ প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা যায়, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার পঞ্চপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর পিছনে বটগাছ তার পরেই একটি টিন শেড কালি মন্দিরে সন্ধ্যায় স্থানীয় এক হিন্দু মহিলা সন্ধ্যা কালীন পূজার সময় প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা-আর্চনা শেষে বাড়িতে চলে যান। পাশের স্কুলে থাকা নির্মান শ্রমিকরা একটি নসিমন থেকে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত রড নামাচ্ছিল। পরে হটাৎ প্রতিমায় থাকা কাপড়ে আগুন লাগলে স্থানীয় জনতা এগিয়ে এসে আগুন নেভায়, বেশ কিছুটা পুড়েও যায় এসময় নির্মাণ শ্রমিকরাও এলাকাবাসীর সাথে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগে কোন দিন মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি তাই স্থানীয়রা নির্মান শ্রমিকদের উপর দোষারোপ করে এবং অগ্নি সংযোগ সন্ধেহে হটাৎ চড়াও হয় এবং ঘটনাটি মুহুর্তে আশে পাশে কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী নির্মাণ শ্রমিকদের উপর হামলা করে গণপিটুনি দিয়ে তাদের বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটক রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক ঘন্টা চেষ্টার পরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এঘঠনায়
মধুখালি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মিরাজ হোসেন, জানান মন্দিরে অগ্নিসংযোগ সন্দেহে নির্মাণ শ্রমিকদের উপর হামলা ঘটনা ঘটেছে, ৭ জনের তিনজনকে আমরা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছি ৪ জনকে জেলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমুর্ষ অবস্থায় পাঠালে ২ জন মারা যায়। আমাদের দুই জন সদস্য মধুখালি হাসপাতালে ভর্তি। আমি সহ আরো ৯ জন সদস্য প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি।
জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মধুখালী সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন কালবেলাকে বলেন”সন্ধ্যার পরে কালী মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে জান যায়নি কিন্তু বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পাশের পঞ্চপল্লী বিদ্যালয়ে কাজ করতে আস নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর দোষারোপ করে হামলা করেছে, মারপিট করেছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ সেখানে যায়। আমরাও যায় পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য এবং রাত সাড়ে ১২ টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।”
জেলা পুলিশ সুপার এম মোর্শেদ আলম কালবেলাকে বলেন, স্থানীয় মন্দিরে আগুন লেগেছে সেটাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী পাশের স্কুলে কাজ করা লেবারদের সন্দেহ করে মারধর করে, হাজার হাজার জনতা ওদের আটকে রেখেছে এমন খবরের ভিত্তিতে থানার ওসি ও ইউএনও পুলিশ সহ ওখানে গেলে তারা আটকা পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে আমিও যায়। রাত ১২ টার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এখনও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে, পরিস্থিতি শান্ত আছে।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার কালবেলাকে জানান পরিস্থিতি থমথমে আছে৷ তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের জন্য বলা হয়েছে। আজ থেকে তারা থেকে দায়িত্ব পালন করবে।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখতেই বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে কারা লাগিয়েছে সেটা তদন্তের জন্য তিনদিনের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্তকমিটি প্রধান করব তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।