- আমাদের ধর্মীয় পার্থক্য, কখনো জাতিকে বিভেদ করতে পারে না।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রামু:
জাতীয় সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেছেন, আমাদের ধর্মীয় পার্থক্য, কখনো জাতিকে বিভেদ করতে পারে না। আমাদের ধর্মীয় পার্থক্য, কখনো আমাদের লক্ষ্যে ফাটল ধরাতে পারবে না। কেউ ফাটল ধরাতে চাইলেও একসাথে তা প্রতিহত করা হবে। বিভিন্ন ধর্মে খারাপ মানুষ আছে। খারাপ মানুষের বুদ্ধি আমরা ধরবো না। আমরা আমাদের ঐক্য ধরে রাখবো। অজানা-অচেনা কোন মানুষকে মসজিদ, মন্দির, বিহারে জায়গা দিবেন না। অজানা-অচেনা মানুষ আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে। সেই বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
গতকাল শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় রামুর ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম তীর্থস্থানে শ্রীমৎ শাসনবংশ স্থবিরের অন্ত্যেষ্টক্রিয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি আরও বলেন, ধর্মীয় ব্যক্তিরা হচ্ছেন, সমাজের শ্রেষ্ঠ মানুষ। জীবন-যৌবন বিসর্জন দিয়ে পরিবার পরিজন ফেলে, শুধু ধর্মের জন্য যারা জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, তারা শ্রেষ্ঠ মানুষ। নবীজীর শিক্ষা, প্রত্যেক ধর্মের মানুষকে সম্মান জানাতে আমরা বাধ্য। প্রতিটি মানুষকে সমান ধর্মীয় স্বাধীনতা দিতে হবে। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দ্বায়িত্ব দিয়েছেন, আমরা সেই কাজগুলো করতে বাধ্য।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, আমরা এখন শংকিত। আমাদের থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রাখাইন আর্মি। সেখানে আরাকান আর্মির নাম দিয়ে যুদ্ধ চালাচ্ছ। তারা আমাদের সীমান্তে আছে। এক সময় সেখানে ছিলো, রোহিঙ্গা সমর্থিত আরসা। এখন সেখানে আরসা নেই। এখন আছে আরাকান আর্মি আর মিয়ানমার আর্মি। বাঁচার তাগিদে যুদ্ধ চলছে মিয়ানমারে। এরা মানুষের কথা বৃুঝে না। এরা পাগলা জাতি। মিয়ানমার ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের সাথে যুদ্ধে আসতে পারে। আমাদের সেনাবাহিনী প্রস্তুত। আপনাদের সকলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা, সমর্থন দিবেন।
অন্ত্যেষ্টক্রিয়া অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম, রামু থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান, রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান প্রমুখ।
শুক্রবার দিনব্যাপী শ্রীমৎ শাসনবংশ স্থবিরের অন্ত্যেষ্টক্রিয়া অনুষ্ঠান ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলনের সকাল ও দুপুরে অধিবেশন সভাপতিত্ব করেন, রামুর উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারে পরিচালক বিজয়রক্ষিত মহাথের এবং উখিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতির সভাপতি এস. ধর্মপাল মহাথের। উদ্বোধক ছিলেন, আর্য্য বংশ ভিক্ষু সংস্থার মহাসচিব করুনাশ্রী মহাথের এবং জ্ঞানসেন বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রামণ প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কুশলায়ন মহাথের।
প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব ড. সংঘপ্রিয় মহাথের এবং চান্দগাঁও শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ এস. লোকজিৎ মহাথের। মূখ্য আলোচক ছিলেন, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার
ধর্মীয় সচিব তিলোকাবংশ মহাথের।
বিশেষ ধর্মদেশক ছিলেন, ধেছুয়াপালং শ্রদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ইন্দ্রবংশ মহাথের, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ শীলপ্রিয় মহাথের, উখিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতি প্রজ্ঞা মহাথের, কোটবাজার পূর্ব রত্না আনন্দ বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতি লায়ন মহাথের, রামু শ্রীকুল মৈত্রী বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাতিলোক থের, কুশলায়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্যোতি কুশল থের, রামু হাজারিকুল বোধিরত্ন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সৌরবোধি থের, খরুলিয়া ধর্মজ্যোতি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ করুনাপ্রিয় থের, কক্সবাজার হোয়াইট টেম্পলের পরিচালক প্রজ্ঞাসেন থের, চেদিরপুনি নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতিপাল মহাথের, উকুসল্ল্যা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্ঞানপ্রিয় মহাথের, শাসনতীর্থ সুদর্শন বিহারের অধ্যক্ষ শাসনপ্রিয় মহাথের, কুতুপালং নবোদয় মৈত্রী বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতিলংকার মহাথের, পুরাতন রুমখাঁ ত্রিরত্ন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতিপ্রিয় থের, রামু প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারের অধ্যক্ষ শীলমিত্র থের, ভালুকিয়া কালাচাঁদ সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতি শান্ত থের, রেজুরকুল পুরাতন স্বদ্ধর্ম বিকাশ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতিধর্ম থের, কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ থের, বুদ্ধজ্যোতি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতিঅগ্র থের, রেজুরকুল ধাতুচৈত্য বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ কর্মশ্বর থের, কুতুপালং ধর্মাংকুর বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ সুমনপ্রিয় ভিক্ষু।
প্রয়াত শ্রীমৎ শাসনবংশ স্থবির ছিলেন, রামুর ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম তীর্থস্থানের আবাসিক প্রবীন ভিক্ষু এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংঘিক ব্যক্তিত্ব পন্ডিত জে. প্রজ্ঞাবংশ মহাথের’র অন্তিম শিষ্য। সন্ধ্যায় রাংকুট প্রাঙ্গণে প্রয়াত শ্রীমৎ শাসনবংশ স্থবিরের অন্ত্যেষ্টক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।