মো. সরওয়ার জাহান ;;রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বদুপাড়া রাস্তায় ছুরিকাঘাতে নাজেম মওলা সাহেদ (ছায়া) নামে এক পরোপকারী প্রতিবাদী যুবক – কে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০:৩০ মিনিটে দিকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত নাজেম মাওলা সাহেদ ছায়া কচ্ছপিয়ার রূপনগর গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি নাইক্ষ্যংছড়ির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি কৃষক লীগ নেতা বলে জানা গেছে। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নাজেম মাওলা সাহেদ (ছায়ার) ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং মোটরসাইকেল যুগে নিহত ছায়ার সাথে ঘটনাস্থলে যাওয়া যুবক নাইক্ষ্যংছড়ি ২ নং ওয়ার্ড এলাকার আবু হান্নান বলেন- নাইক্ষ্যংছড়ি বিছামারা এলার টমটম চালক ফেরদৌস (পিরো) গর্জনিয়া বাজার হয়ে কচ্ছপিয়া মৌলভীর কাটা সড়ক দিয়ে রাত আনুমানিক ১০ টায় নাইক্ষ্যংছড়ি যাচ্ছিলেন। মৌলভীর কাটা চার রাস্তার মুখ নামক স্থানে যাওয়ার সাথে সাথে তার গাড়ি গতিরোধ করেন বড় জাংছড়ির এলাকায় পেঠান সওদাগরের ছেলে দেলোয়ার হোসেন। এসময় টমটম চালক ফেরদৌস কে খারাপ ভাষায় বিভিন্ন রকমের গালিগালাজ করেন দেলোয়ার। এসময় দেলোয়ার তাকে মারধর করেন এবং নিজেকে বড় জামছড়ি এলাকার গুন্ডা বলে প্রকাশ করেন। এদিকে টমটম চালক ভুক্তভোগী ফেরদৌস ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- দেলোয়ারের পাশে আরও ২ জন অপরিচিত লোক ছিল। তরা তাকে কোন কিছু বলেননি এবং দেলোয়ার কে কোনপ্রকার বাধাদানও করেননি। পরে তিনি চলে গেলে ঘটনাটি জানাজানি হয়। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী আবু হান্নান আরও বলে এ ঘটনার প্রতিবাদ করার জন্য নিহত ছায়া তাকে নিয়ে মোটরসাইকেল দিয়ে বদু পাড়া এলাকায় যান রাত প্রায় সাড়ে ১০টায়। যেখানে পৌঁছে দেলোয়ার কে প্রশ্ন করা হয়েছিল টমটম চালক নিরিহ ছেলেটিকে কেন মারধর করছেন? তখন ঘাতক দেলোয়ার নিজেকে গুন্ডা বলে পরিচয় দেন। যখন যা ইচ্ছে করবে বলে তাকেও গালিগালাজ করতে থাকে। এসময় নিহত ছায়া ঘাতক দেলোয়ার কে একটা থাপ্পড় মারেন। তখন সাথে সাথে নেজাম মাওলার বুকে ঘাতক দেলোয়ার একাধিক ছুরিকাঘাত করে। কয়েক গজের ভিতর ঘাতক দেলোয়ার সাথে বদু পাড়া এলাকার মোঃ আলী ছেলে ওসমান ও আরেকজন অপরিচিত যুবক দাড়ানো ছিল বলে আবু হান্নান জানান। আবু হান্নান আরও বলেন – ঘাতক দেলোয়ার একাই আঘাত করেছে নিহত ছায়া কে। তার পাশে আরো দুইজন যুবক দাড়িয়ে থাকলেও কেউ ছায়া কে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি বলে জানান। তখন আবু হান্নান দেলোয়ার কে থামানোর চেষ্টা করলে তাকেও নড়াছড়া না করতে বলেন ঘাতক। এর মাটিতে ঢলে পড়ে নিহত ছায়া। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ছায়াকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে মারা যায়। আজ ২৭/০৩/২০২৪ ইংরেজী কচ্ছপিয়া রূপনগর মসজিদ সংলগ্ন মাটে তার জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়। তার জানাযায় শত শত লোকজন অংশ নেয়। বর্তমানে এ ঘটনায় কচ্ছপিয়ায় – গর্জনিয়া – নাইক্ষ্যংছড়ি থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ নৃশংস হত্যার রিপোর্ট করতে গিয়ে ২য় অভিযুক্ত ওসমানের বাড়িতে গিয়ে ওসমানের মা বাবা ও স্ত্রী থেকে জানা যায়-ছায়া এবং ওসমান অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের সম্পর্ক আপন ভাইদের মতই, কি কারণে এমন নির্মম হত্যা তা তাদের ধারণা নাই। কান্না জড়িত কন্ঠে ওসমানের মা বলেন- আমার সন্তান নেশা পান করে এটা সঠিক, কিন্তু সে কখনোই কাউকে খুন করতে পারেন না। যদি তার ছেলেও এটির সাথে জড়িত থাকে, তার বিচার হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। চলিত মাসে এ নিয়ে রামুর গর্জনিয়া কচ্ছপিয়া তে জোড়া খুন হলো। স্থানীয়রা জানান বর্তমানে এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। এদিকে নিহত নাজেম মাওলার জানাযায় অংশ নিয়ে রামু থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান বলেন – এ নৃশংস হত্যায় যারাই জড়িত পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারী বজায় রেখে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। পুলিশ সহ আর কয়েকটি গোয়েন্দা দল অভিযানে রয়েছে। গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত পরিদর্শক মো: সাইফুল ইসলাম ঘটনান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- নাজেম মাওলা সাহেদ ( ছায়ার) ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেন জানান পুলিশ কর্মকর্তা। কচ্ছপিয়া – গর্জনিয়া – নাইক্ষ্যংছড়ির সর্বস্তরে লোকজনের কাছে তার পরিচিত ছিলঃ- নিহত নাজেম মাওলা সবসময় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত। তিনি চাইতেন সবাই মিলেমিশে সুন্দরভাবে চলুক, এ কারণে তিনি সবসময় ঝগড়া বিবাধে উভয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকতেন। তিনি অত্যন্ত অমায়িক, নম্র, ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।